৮ম শ্রেণীর বিজ্ঞান এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর ২০২১ – ৯ম সপ্তাহ

৮ম শ্রেণীর বিজ্ঞান এ্যাসাইনমেন্ট ২০২১ – ৯ম সপ্তাহ

তােমার প্রতিদিনের পর্যবেক্ষণ থেকে ব্যাপন ও অভিস্রবণের দুটি করে ঘটনা উল্লেখ কর। ব্যাপন ও অভিস্রবণ প্রক্রিয়ার থেকে যে কোনাে একটির জন্য পরীক্ষণ সম্পন্ন করে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি ধারাবাহিকভাবে লিখ।

সংকেত:
ক) ব্যাপন এর বৈশিষ্ট্য
য) অভিস্রবণের বৈশিষ্ট্য
গ) ব্যাপন ও অভিস্রবণের পরীক্ষণ (ছালা পানিতে ভেজান, রান্লার গন্ধ ছড়িয়ে পড়া, ফুড কালার পানিতে ছড়িয়ে পড়া এবুপ বিষয় পর্যবেক্ষণ)

 

৮ম শ্রেণীর বিজ্ঞান এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর ২০২১ – ৯ম সপ্তাহ

উত্তর :

আমার বাবার পারফিউমের বোতলের মাথায় চাপ দিলে ফুস করে শব্দ করে বাতাস ও তরল বের হয়। ঘরের যে প্রান্তেই থাকি না কেন, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সুঘ্রাণ আসে নাকে। ভেবে দেখেছি পারফিউমের কণাগুলো কত দ্রুত আমার নাকে চলে আসে। এটাই হলো ব্যাপন।

আবার বাতাসের মধ্যে যদি কোনো হালকা গ্যাসীয় বস্তু ছড়িয়ে দেই তাহলে তা বেশি ঘনত্ব থেকে কম ঘনত্বের দিকে ছুটে যাবে। এটাও ব্যাপনের জন্য হয়ে থাকে। কয়েকটি শুকনো কিশমিশকে একটা কাপে পানি ঢেলে তাতে কয়েক ঘণ্টা ছেড়ে রাখলে পরে দেখা যাবে যে কিশমিশগুলো ফুলে ঢোল। কারণ অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় কিশমিশের পাতলা পর্দা ভেদ করে ভেতরে পানি ঢুকে গেছে।

(ক) ব্যাপন এর বৈশিষ্ট্যঃ

তরল বা বায়বীয় পদার্থের স্বতঃ স্ফূর্তভাবে অধিক ঘনত্বের অঞ্চল থেকে কম ঘনত্বের অঞ্চলে যাওয়াকে ব্যাপন বলে। কঠিন পদার্থের ব্যাপন ঘটে না। নিন্মে ব্যাপন এর কিছু বৈশিষ্ট্য দেওয়া হলোঃ

১. বস্তুর ভর ও তাপমাত্রা: ব্যাপনের হার বস্তুর ভরের উপর নির্ভরশীল। ভর যত বেশি হবে বস্তুর ব্যাপনের হার তত কম হবে। অর্থাৎ, ব্যাপন হার বস্তুর ভরের (মোলার ভর) ব্যস্তানুপাতিক।

২. পদার্থের অণুর ঘনত্ব: যে পদার্থের ব্যাপন ঘটবে সে পদার্থের অণুর ঘনত্ব বেশি থাকলে ব্যাপন হার বেশি হবে, অণুর ঘনত্ব কম হলে ব্যাপন হার কম হবে।

৩. মাধ্যমের ঘনত্ব: যে মাধ্যমে ব্যাপন ঘটবে সে মাধ্যমের ঘনত্ব বেশি বলে ব্যাপন হার কম হবে, মাধ্যমের ঘনত্ব কম হলে ব্যাপন হার বেশি হবে।

৪. বাযুমণ্ডলের চাপ: বাধুমণ্ডলের চাপ বাড্লে ব্যাপন হার কমবে, বাযুমন্ডলের চাপ কম হলে ব্যাপন হার বাডবে।

৫. ঘনত্বের তারতম্য: ঘনত্বের তারতম্য যত বেশি হয় তত তাড়াতাড়ি কণাগুলো ছডিযে পড়ে। সাধারণত একই সময়ে এবং একই স্থানে পরিবেশের তাপমাত্রা ও বাযুমণ্ডলের চাপ সমান থাকে, সেক্ষেত্রে ব্যাপন পদার্থের ঘনত্ব এবং মাধ্যমের ঘনত্বই ব্যাপন নিষস্ত্রণকারী প্রভাবক হয়ে দাড়ায়। মাধ্যম ও ব্যাপন পদার্থ (যেমন-বেলুন ভর্তি বাতাস এবং চারপাশের বাতাস) যদি একই হয় তাহলে ততক্ষণ পর্যন্ত ব্যাপন ঘটবে যতক্ষণ পর্যন্ত দুটোর ঘনত্ব সমান না হয়।

(খ) অভিস্রবণের বৈশিষ্ট্যঃ

অভিস্রবণ বলতে দুটো ভিন্ন ঘনতের দ্রবণ একটি অর্ধভেদ্য পর্দা দিয়ে পাশাপাশি আলাদা করে রাখলে পর্দা ভেদ করে কম ঘন দ্রবণ থেকে অধিক ঘন দ্রবণের দিকে দ্রাবক অণু প্রবেশ করার প্রক্রিযাকে বোঝায়।

নিম্নে অভিস্রবণের কিছু বৈশিষ্ট্য দেওয়া হলোঃ

১. দুটো দ্রবণের ঘনত্ব সমান না হওয় পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে।

২. অভিস্রবণ এক প্রকার ব্যাপন।

৩.অভিস্রবণ কেবলমাত্র তরলের ক্ষেত্রে ঘটে। একে অন্যভাবে বলা যায কোনো শক্তির প্রযোগ ছাডাই তরলের বাস্তবিক চলাচল। অভিস্ত্রবণকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়: অন্তঃঅভিস্রবণ, বহিঃঅভিস্রবণ ।

৪. কোষের বাইরে অবস্থিত তরল পদার্থ যখন অর্ধভেদ্য পর্দা ভেদ করে ভেতরে প্রবেশ করে তখন সেই প্রক্রিয্যুকে অন্তঃঅভিস্রবণ বলে। কোষের ভেতর থেকে যখন তরল পদার্থ পর্দা ভেদ করে বাইরে বেরিযে যায় তখন সেই প্রক্রিযাকে বহিঃঅভিস্রবণ প্রক্রিয়া বলে।

(গ) ব্যাপন ও অভিস্রবণের পরীক্ষণঃ

ব্যাপন জিনিসটা আমাদের আশপাশে অহরহ ঘটে। সুক্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে বড় বড় কাজেও ব্যাপন দেখা যায়। যেমন- ঘরের এক পাশে কেউ সুগন্ধি স্প্রে করলে সেটা মুহূর্তের মধ্যে সারা ঘরে ছড়িয়ে যায়। কেন? কারণ সুগন্ধিটা বোতলের ভেতর খুব চাপের মধ্যে থাকে।

এতই চাপে থাকে যে সে গ্যাস থেকে তরল হয়ে যায়। ওই তরল যখন আচমকা বের হওয়ার সুযোগ পায়, তখন তার মাথা খারাপ হয়ে যায়। সে যেখানেই কম ঘনত্ব পাবে, সেখানেই ছুটে যাবে। আমাদের চারপাশে সাধারণত যে বাতাস থাকে, সেটা বেশ কম ঘনত্বের। আর তাই সুগন্ধির কণাগুলো দূত সব জায়গা দখল করে নেয়। এটা ব্যাপন প্রক্রিয়ার বেশ ভালো উদাহরণ।

এক গ্রাস পানিতে এক ফোটা গাঢ় নীল জলরং ঢেলে দিলে সেই রং ছড়িয়ে যেতে থাকে। ততক্ষণ ছড়াতে থাকে, যতক্ষণ পুরো পানি নীল হয়ে যাচ্ছে। সেই রঙিন পানি আবার যদি আরেকটি বড় পানিভর্তি গ্রাসে ঢালি তা হলে কী ঘটবে? ওই বড় গ্লাসেরও সব পানি রঙিন হয়ে যাবে, কিন্তু পরেরবার দেখা যাবে বড় গ্লাসের পানির রং আগের চেয়ে হালকা হয়ে গেছে।

কারণ পরের গ্রাসে পানির পরিমাণ বেশি। এতে বোবা যায়, ব্যাপন প্রক্রিয়া ততক্ষণ চলতেই থাকবে, যতক্ষণ না দুটি তরলের ঘনত্ব সমান হচ্ছে। মানে একটি পাত্রে রঙিন পানি ঢাললে রংগুলো ততক্ষণ পর্যন্ত ছড়াবে, যতক্ষণ না সেটা গ্রাসের সব পানির অণুতে মিশে যাচ্ছে। মানে সব জায়গায় পানির ঘনত্ব সমান না হওয়া পর্যন্ত রং ছড়াতেই থাকবে। অভিস্রবণের বেলায়ও তাই। পানিতে ডোবানো কিশমিশ ফুলে ঢোল হবে ঠিকই, কিন্তু কিশমিশটা ফুলতে ফুলতে একেবারে ডিমের সমান বড় হয়ে যাবে না। কারণ একটা পর্যায়ে তার পানি শোষণ করা বন্ধ হয়ে যাবে। কোন পর্যায়ে? যখন কিশমিশের ভেতরের ঘনত্ব আর বাইরের পানির ঘনত্ব একই হয়ে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *